তামাদী আইন-১৯০৮- -

আসসালামু-আলাইকুম
কেমন আছেন? আশারাখি আপনারা ভাল আছেন। এবার আলোচনায় আসাযাক তামাদি আইন-1908 এ বইটি নিয়ে। তামাদি আইন-1908 বিষয়টি আমি সব সময় বুনাস হিসেবে। সিলেবাসে আকারের দিক থেকে সবচেয়ে ছোট হলেও এর গুরুত্ব কিন্তু কম নয় বরং সমান। পরিক্ষায় এ বিষয়টি সমান গুরুত্ববহন করলেও এ বিষয়টি কিন্তু ছাত্রদের জন্য আশারবানী হিসেবে কাজ করে। সকল ছাত্রদের টার্গেট থাকে শত ভাগ। 

তামাদি আইন-1908 এ বিষয়টি বার কাউন্সিল পরীক্ষায় খুবই জরুরী কারণ এম.সি.কিউ পরীক্ষায় এ বিষয় থেকে ১০টি প্রশ্ন, এবং লিখিত পরীক্ষায় ১৫ নাম্বারের জন্য ২টি প্রশ্ন থাকে যার মধ্যে ১টি বাধ্যতামূলক প্রশ্ন থাকে। অতএব পরীক্ষায় পাশের নাম্বারে এ সাক্ষ্য আইনটিকে কোন ভাবেই হালকা ভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। এখন আসি এ বইটি কিভাবে শুরু করবেন।  তামাদি আইন-1908 আইন কিন্তু দেওয়ানী ফৌজদারী সকল বিয়ষের সহায়ক আইন তাই সাক্ষ্য আইনটি আপনার কোর্টের জীবনের জন্যও খুবই প্রয়োজনীয়। পরিক্ষার জন্য সম্পর্ণ বইটি পড়ুন, বইটি একেবারে ছোট তাই আয়েত্বে আনতেও অনেক সহজ হবে। 




সূচিপত্রঃ
১। এক নজরে তামাদি আইন-1908 
২।  গুরুত্বপূর্ণ ধারা সমূহঃ
৩। গুরুত্বপূর্ণ ধারা ও এর সংক্ষিপাত বর্ণনাঃ
৪। বিষয় ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ টিকাঃ
৫। এক নজর দেখে নেই- 


১। এক নজরে তামাদি আইন-1908 


তামাদি আইন-1908 সালের ৯নং আইন। তামাদি আইন 1908 সালের ৭ই আগষ্ট  প্রকাশিত হয় এবং 1909 সালের ১লা জানুয়ারী কার্যকর হয়। এই আইনে মোট ৫টি অধ্যায়, ২৯টি ধারা, ১৮৩টি অনুচ্ছেদ এবং মোট ৩টি তফসিল আছে। তামাদি আইন-1908 আইন মুলত পদ্ধতিগত আইন। 



১ম অধ্যায়- প্রাথমিক বিষয়
০১ থেকে ০২ ধারা পর্যন্ত। 

২য় অধ্যায়- মামলা, আপীল ও দরখাস্তের তামাদি
০৩ থেকে ১১ ধারা পর্যন্ত। 

৩য় অধ্যায়- তামাদির মেয়াদ গগণা
১২ থেকে ২৫ ধারা পর্যন্ত।

৪র্থ অধ্যায়- দখলবলে মালিকানা স্বত্ব অর্জ
২৬ থেকে ২৮ ধারা পর্যন্ত। 

৫ম অধ্যায়- সংরক্ষণ ও বাতিল
২৯ ধারা পর্যন্ত। 


২।  গুরুত্বপূর্ণ ধারা সমূহঃ

২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮।

৩। গুরুত্বপূর্ণ ধারা ও এর সংক্ষিপাত বর্ণনাঃ
 ধারা-৩ঃ তামাদির মেয়াদান্তে দায়েরকৃত মামলা ইত্যাদি খারিজ- অত্র আইনের ৪ ধারা থেকে ২৫ ধারা সমূহ সহ ১ম তফসিলের নির্ধারিত তামাদির মেয়াদ উত্তীর্ণ হইবার পর মামলা, আপীল/ দরখাস্ত দাখিল করা হইলে বিবাদী পক্ষ যদি তামাদির প্রশ্ন উৎথাপন নাও করে তবুও উক্ত মোকদ্দমা আপীল বা দরখাস্ত বাতিল বলে গন্য হইব। উভয পক্ষ যদি একমত হইয়া তামাদি বাড়াতে চায় তাও পারিবে না  এমনকি সরকারও তামাদি হইতে অব্যাহতি লাভের অীধকারী নয়। 

ধারা-৪ঃ আদালত বন্ধ থাকা অবস্থায় যখন তামাদি মেয়াদ উত্তীর্ণ  হয়- এ ধারার আলোচ্য বিষয় হলো কোন মামলা, আপীল বা দরখাস্ত জন্য যে দিনটি ধার্য্য থাকে ঐদিনটি যদি বন্ধ থাকে তাহলে আদালত পুনরায় খুলিবার দিন উক্ত মামলা বা দরখাস্ত দাখিল করা যাবে। উদাহরণ- আপীল দায়েরের শেষ তামাদি সময়কাল ২৫ তারিখ কিন্তু ২৫ তারিখ শুক্রবার তাহলে পুনরায় আদালত খুলিবার দিন অর্থ াৎ রবিবার আপীল জমা দেয়া যাবে। 

ধারা-৫ঃ ক্ষে্ত্র বিশেষে মেয়াদ বৃদ্ধি করণ- এটি েএকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা। আমরা জানি তামাদির মেয়াদ শেষ হলে আর মামলা /আপীল ইত্যাদি দায়ের করা যায় না, কিন্তু এই ৫নং ধারার বিশেষ ক্ষেত্রে দায়ের করা অনুমতি প্রদান করিয়াছে। তবে এক্ষেত্রে কেন তামদি সময়ের মধ্যে মামলা/আপীল তামাদি মেয়াদের মধ্যে দায়ের করা সম্ভব হয়নি তা দরখাস্তকারী/আপীলকারীকে দরখাস্তের মাধ্যমে এই মর্মে  আদালতের সন্তুষ্টি সাধন করতে হবে যে মামলা/আপীল দরখাস্তটি দায়েরের যথেষ্ট কারণ ছিল। নমুনা দরখাস্ত

ধারা-৬ঃ বৈধ অপারগতা- আমরা জানি অত্র আইনের ৩ ধারা মোতাবেক তামাদির পর কেউ কোন মামলা/দরখাস্ত দাখিল করতে পারে না। কিন্তু অত্র ধারা ভাষ্য মতে কিছু ক্ষেত্রে বৈধ অপারগতার কারণে তামাদির পরও মামলা দায়ের করা যায়।  যেমন- ১। যেই ক্ষেত্রে মামলা বা কার্যধারা দায়ের করিবার কিংবা ডিক্রি জারির জন্য দরখাস্ত দাখিলের অধিকারী ব্যক্তি যেই সময় হইতে তামাদি মেয়াদ গণনা করিহে হইবে সেই সময় নাবালক, উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি থাকে, সেই ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি তাহার উপরোক্ত অপারগতার অবসান হইবার পর অপারগতা না থাকিলে মামলা/আপীল বা দরখাস্ত দায়ের করিতে পারিবে। যেমন-২। যেই সময় থেকে তামাদী মেয়াদ গগনা শুরু করিতে হ্েবে সেই সময় ১নং এ বর্ণিত যে কোন দুটি অপারগতায় আচ্ছন্ন যে ক্ষেত্রে দুটি সমাপ্ত হওয়ার পর বা যদি একটি অপারগতা শেষ হওয়ার পূর্বে নতুন একটি অপারগতা শুরু হয় তবে দুটি শেষ হওয়া পর সেই মেয়াদের মধ্যে আপীল/মামলা দায়ের করিতে পারিবে। যেমন-৩। যেই ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্য ন্ত অপারগতা থাকে তাহলে মৃত্যুর পর তার আইনানুগ প্রতিনিধি ঐ ব্যক্তির মৃত্যুর পর অপারগতা না থাকিলে বর্ণিত মেয়াদে মামলা/আপীল দরখাস্ত দায়ের করিতে পারিবে। যেমন-৪। যেই ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির আইনানুগ প্রতিনিধির অনুরূপ অপরাগতায় পতিত হয় সেই ক্ষেত্রে ১ ও ২ ধারা প্রযোজ্য। 

 ধারা-৯ঃ সময়ের অভিরাম চলমান- একবার তামাদির মেয়াদ অতিবাহিত হইতে শুরু করিলে পরবর্তি
তে কোন অপারগতায় বা অক্ধাষমতায় তাহা বন্ধ হইবে না। উদাহরণ- আপীল করার সময়  শুরু হওয়ার পর তিনি পাগল হয়ে গেলেন তারপরও তাহার নিদিষ্ট সময়ের মধ্যেই আপীল করিতে হইবে। 

ধারা-১৪ঃ এখতিয়ারবিহীন আদালতে সদুদ্দেশ্যমূলক কার্যধারায় যেই সময় গণনা হইতে বাদ দিতে হইবে- কোন ব্যক্তি সদুদ্দেশ্যে ভুল আদালতে মামলা দায়ের করলেন, এতে সে সময় অপচয় হলো তা তামাদি থেকে বাদ দিয়ে সময় গণনা করতে হয়। 

ধারা-১৮ঃ ‍প্রতারণার ফল- যেই ব্যক্তি কোন একটি মামলা দায়ের বা দরখাস্ত দায়ের করার অধিকারী কিন্তু প্রতারণার মাধ্যমে তাহার নিকট হইতে গোপন রাখা হইছে সেই সকল ক্ষেত্রে- সে প্রতারণা করিয়াছে বা তার প্রতিনিধি অথবা- যে ব্যক্তি স্বত্ব দাবী করে তাহার বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি যেই দিন প্রতারণার কথা জানিতে পারে সেই দিন হইতে তামাদি মেয়াদ গণনা করিতে হইবে। 

ধারা-১৯ঃ লিখিত প্রাপ্তি স্বীকারের ফলাফল- যেই ক্ষেত্রে তামাদি মেয়াদ সমাপ্ত হইবার পূর্বে
 কোন লিখিত স্বাক্ষরিত ভাবে উক্ত সম্পত্তির স্বত্বের দায় স্বীকার করে তাহলে স্বাক্ষরিত হওয়ার সময় হইতে নতুন করিয়া সময় গণনা শুরু হইবে। স্বাক্ষরে তারিখ না থাকিলে মৌখিক স্বাক্ষ্য দেয়া যাবে। 

ধারা-২০ঃউত্তর দায় সংক্রান্ত ঋণ পরিশোধের অথবা সুদ প্রদানের ফলাফল। বন্ধকী জমির ফসল প্রাপ্তির রষিদের ফরাফল-যেই ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি দেনা পরিশোধের জন্য নির্ধারিত মেয়াদ উত্তীর্ণ পূর্বে দেনা পরিশোধ করে তাহলে নতুন করিয়া তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হইবে। 

ধারা-২৬ঃ সুখাধিকারসমূহ অর্জন- যেই ক্ষেত্রে দালানে আলো বাতাস প্রবেশ ও ব্যবহারের সুখাধিকার, জলস্রোত অথবা পানির ব্যবহার,  ২০ বছর ভোগ করা হয়েছে সেই ক্ষেত্রে সুখাধিকার নিরস্কুশ ও অলঙ্গনীয় হইবে।  এই এই সম্পত্তি সরকারের হয় তবে তার সময়সীমা হবে ৬০ বছর। যদি কোন মামলায় উক্তরূপ কোন অধিকারের দাবির বিরোধিতা করা হয় তবে সেই মামলায় উক্ত উভয় ক্ষেত্রেই বিশ বছর বলিতে মামরা দায়েরের তারিখ হইতে অব্যবহিত পূর্ববর্তী  ২ বৎসরের মধ্যে সমাপ্ত ২০ বৎসর বুঝাইবে। মনে ২বছর তামাদি। 

ধারা-২৮ঃ সম্পত্তির অধিকার বিলুপ্ত- কোন সম্পত্তি দখল পাইবার জন্যে মোকদ্দমার দায়ের করার ব্যাপারে এ আইনে যে মেয়াদ নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে, তা উত্তীর্ণ হওয়ার পর সে ম্পত্তিতে বাদীর অধিকার  বিলুপাত হয়ে যায়। (সাধারণ তামাদি-১২ বছর (৮ ও ৪২ ধারা)

ধারা-২৯ঃ ব্যতিক্রম- কিছু আইন আছে যেখানে এই তামাদি আইন প্রয়োগ করা যায় না। যেমন-১। ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের ২৫ ধারা, যেমন-২। বিবািহ বিচ্ছেদ আইন ১৮৬৯ সালের ৪নং আইন, ইত্যাদি। 


৪। বিষয় ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ টিকাঃ
১। সুখাধিকার- সুখাধিকার বলিতে বুঝি একটি জিনিস ব্যবহার করতে করতে তা ব্যবহার করার অধিকার, যেমন গ্রামবাসী একটি জলাধার থেকে জমিতে বিগত ২০ বৎসর যাবৎ পানি ব্যবহার করতেছেন, এখন  ঐ ব্যক্তি গ্রামবাসীদের আর বাধা দিতে পারবেনা। গ্রামবাসী একজনের জমি দিয়ে যাতায়াত করতেছে ঐ ব্যক্তি সময়ের পর আর বাধা দিতে পারবেনা। 
২। সম্পত্তির অধিকার বিলুপ্ত- সাধারণত স্থাবর সম্পত্তির অধিকার বিলুপাত হয়না কিন্তু কোন বাদীর বিরুদ্ধে তার অধীকার হরণের তামাদি শুরু হয় কিন্তু বাদী কোন ধরণের প্রকার গ্রহন করে না, তাহলে বাদীর উক্ত সম্পত্তি হইতে অধিকার বিলুপ্ত হয়ে যায়। 
৩। যথেষ্ট কারণ-  অত্র আইনের ৫ ধারায় যথেষ্ট কারণ বলতে বুঝানো হয়েছে যেমন- অসুস্থতা, অন্তরীণদশা, ভ্রান্তি, কৌঁসুলীর ভুল, আইন ব্যাপারে অজ্ঞতা বা ভ্রান্তি, সরল বিশ্বাসে ভুল, ভুল আদালতে পদক্ষেপ, ডিক্রি সংশোধনগত তারিখ ভুল, প্রকাশ্য আদালতে রায় ঘোষিত না হইলে, স্ট্যাম্প সংগ্রহে ব্যর্থতা, ইত্যাদি ইত্যাদি। 
৫। এক নজর দেখে নেই- 

No comments:

Post a Comment